২০শে মে, ২০২৫ ইং, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

রাজশাহীতে ধীরে চলো নীতিতে মাদকবিরোধী অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে মন্থর হয়ে পড়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। এই সুযোগে রাজশাহীর রাঘব-বোয়ালরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। শহর থেকে গ্রাম- সবখানেই চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। যাদের মাদক নিয়ন্ত্রণের কথা, সেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। তবে এলিট ফোর্স র‌্যাব মাদকের বড় দু’একটি করে চালান আটক করছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কিছু অভিযান চালালেও প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে পারে না। সীমান্ত থেকে শুধু মাদক জব্দ করে বাহিনীটি। আর জেলা ও নগর পুলিশ প্রতিরাতেই অভিযান চালালেও রাঘব-বোয়াল কেউ গ্রেপ্তার হন না। খুব সামান্য মাদকদ্রব্য নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন খুচরা ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবিরা। ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন বড় বড় মাদক মাফিয়ারা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বড়গাছি গ্রামের সাকিম উদ্দিনের ছেলে ইউসুফ আলী বছর দুয়েক আগেও ছিলেন বেকার। এই সময়ের মধ্যে তিনি জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। গত এক বছরের মধ্যে করেছেন বাড়ি, গাড়ি, দোকানপাটসহ নানা সম্পদ। হয়েছে গার্মেন্ট ও হার্ডওয়্যারের দোকান। গ্যাসের সিলিণ্ডারেরও দোকান করেছেন চারটি। দিয়াড়মহব্বতপুর বাজারে দুটি ও কাদিপুরে তিনটি দোকান করেছেন ইউসুফ। স্থানীয়রা বলছেন, মাদক কারবারে জড়িয়ে অঢেল সম্পদক করেছেন তিনি। শুধু ইউসুফ একা নন। গোদাগাড়ীর অনেকেই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না। মাদকসহ তাদের ধরতেও পারে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ধরা পড়ে চুনোপুটিরা। অথচ গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়েই ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি হেরোইন ঢোকে দেশে। এ উপজেলায় সব সময়ই মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলে। রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতেও ফেনসিডিল কেনাবেচা হয় অনেকটা প্রকাশ্যে। রাজশাহী মহানগরীতেও গাঁজা, ইয়াবা ও দেশি মদের রমরমা ব্যবসা চলছে। রাজশাহী জেলা ও মহানগর পুলিশ তাদের নিজ নিজ এলাকায় প্রতিরাতেই বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিরাতেই ৭০ থেকে ১০০ জনকে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এসব অভিযানে বড় কোনো মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয় না। বেশি কিছু মাদকদ্রব্যও উদ্ধার হয় না। দুই-এক পুরিয়া হেরোইন ও গাঁজা এবং দুই-এক বোতল ফেনসিডিলের মতো সামান্য কিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়। বড় চালান ধরা পড়ে না বললেই চলে। তবে র‌্যাব মাঝে মাঝে দু’একটি বড় চালান ধরে। এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি গোদাগাড়ীর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ১ কেজি ৪৭৫ গ্রাম হেরোইনসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বাহিনীটি। গত বছরের ৪ নভেম্বর ২ কেজি ৪৫০ গ্রাম হেরোইনের আরেকটি বড় চালান আটক করে র‌্যাব। ১৭ ডিসেম্বর ৮৫০ গ্রাম হেরোইনসহ আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গত মঙ্গলবারও গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯৭০ পিস ইয়াবাসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৫ এর রাজশাহীর একটি দল। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান চোখেই পড়ে না। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু আসাধু সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা তুলতেই ব্যস্ত। আর বিজিবির প্রায় প্রতিটি অভিযানেই মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরিত্যক্ত অবস্থায় শুধু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীরা কীভাবে পালিয়ে যায় তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এ বিষয়ে কথা বলতে বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের অভিযান চলছেই। ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে বেশি অভিযান চালানো হয়েছে। জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে বেশি হতে পারে। গত সোমবার ৫০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবারও ১০ গ্রাম হেরোইন জব্দ করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। একই কথা বলেছেন রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম ও নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস। আর র‌্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা একেবাইরেই জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করি। প্রত্যেকটা দিন আমাদের অভিযান চলে। আমরা এক দিনে যে মাদক উদ্ধার করি অন্যরা তা এক মাসেও পারে না। কিছু কৌশল অবলম্বনের কারণে আমাদের উদ্ধারের পরিমাণ বেশি। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ