১৯শে মে, ২০২৫ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

সিনেমা হল নেই ২৫ জেলা শহরে

স্টাফ রিপোর্টার: একটা সময় ছিল যখন কিছু টাকা জমিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বা পরিবারসহ সিনেমা হলে গিয়ে নতুন সিনেমা দেখার অভ্যাস ছিল দর্শকদের। পরিবারের সবার সঙ্গে গিয়ে একই সারিতে বসে ছবি দেখার আনন্দই ছিল আলাদা। বর্তমান সময়ে সিনেমা হলে বসে একসঙ্গে ছবি দেখার অভ্যাসটা অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। ভালো সিনেমা মুক্তি পেলেও দর্শক সমাগম না থাকায় একের পর এক ছবি ব্যবসায়িক বিপর্যয়ের মুখ পড়ছে। এর ফলে প্রায় সময়ই লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে চলচ্চিত্রের প্রযোজককে। গত বছর মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে শাকিব খান অভিনীত ও প্রযোজিত ‘পাসওয়ার্ড’ নামে একটি মাত্র সিনেমা ভালো চলেছে সিনেমা হলে। বর্তমানে সিনেমা হলে দর্শক সমাগম কম হওয়ার ফলে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। অনেক জেলাশহরে এখন কোনো সিনেমা হলই নেই। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সারা দেশে সিনেমা হল ছিল ১ হাজার ৪৩৫টি। এরপর থেকে সিনেমা হলের সংখ্যা কমতে কমতে এখন দেড়শ’র ঘরে এসেছে। এখন অনেক জেলা শহরে সিনেমা হল নেই। এরমধ্যে রয়েছে বরগুনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, নড়াইল, মুন্সীগঞ্জ, নরসংদী, পঞ্চগড়, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ ২৫টি জেলা। এসব জেলা শহরে কোনো সিনেমা হল নেই এখন। রাজধানীর পরেই চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জে সিনেমা হলগুলোর দর্শক ছিল চোখে পড়ার মত। ২০০০ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইল এলাকায় ৪৭টি সিনেমা হল ছিল। এখন সেখানে মাত্র ১২টি হল টিকে আছে। তিনি আরো জানান, একসময় যশোরের পরিচিতি ছিল সিনেমা হলের শহর হিসেবে। ছিল ২১টি সিনেমা হল। এখন যশোরে মাত্র ৪টি সিনেমা হল চালু রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার ৩১ টি সিনেমা হলের মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৫টি। এদিকে রাজধানীতে পুরান ঢাকার গুলিস্তান, নাজ, মুন, মুকুল, সদরঘাটের রূপমহল, আরমানিটোলার শাবিস্তান, পোস্তগোলার ডায়না নামের সিনেমা হলগুলো আর নেই। কারওয়ান বাজার এলাকায় পূর্ণিমা ও কাকরাইলের রাজমণি ও রাজিয়া সিনেমা হলগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত দুই দশকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেছে ২০টি সিনেমা হল। হারিয়ে গেছে অলংকার, লায়ন্স, রঙ্গম, সাগরিকা, বনানী, নূপুর, জলসা, গুলজার, উপহার, রিদম, উজালাসহ আরো কিছু সিনেমা হল। এ ছাড়া দিনাজপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুরে বর্তমানে মাত্র একটি করে সিনেমা হল নিয়মিত কার্যক্রম চালু রেখেছে। অনেক নির্মাতা, বিনিয়োগকারীরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, ভালো কাহিনীর সিনেমা, দক্ষ অভিনয়শিল্পী ও সিনেমা হলের উন্নত পরিবেশের অভাবের কারণে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার প্রতি দর্শকের আগ্রহ কমে গেছে। একই সঙ্গে ঘরে ঘরে স্যাটেলাইট টিভি’র বিস্তার, ইউটিউবে সব ধরনের কনটেন্ট পাবার পাশাপাশি ভিডিও পাইরেসিও এর কারণ। গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াত এ প্রসঙ্গে বলেন, সিনেমা হল কমার পেছনে দু’টি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। মাঝে একটা সময় অশ্লীল সিনেমা নির্মাণ হতো এবং এগুলো সিনেমা হলে দর্শকদের দেখানো হয়েছিল। সেই সময়টাতে ভালো শ্রেণির অনেক দর্শক সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সিনেমা হল মালিকরা তখন পরিবেশ রক্ষা করে রাখতে পারেনি। তবে বর্তমানে ওই সময়টার পরিবর্তন হয়েছে। ভালো মানের সিনেমা এখন নির্মাণ হচ্ছে। আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এখন হয়েছে। একটা কৃষকের ছেলেও এখন আর লুঙ্গি পরে না, জিন্সের প্যান্ট পরে। এখন কাঠের চেয়ারে বসে সিনেমা দেখতে চায় না কেউ। ভালো সিটে বসে এসিতে উন্নত পরিবেশে সকলে সিনেমা দেখতে চায়। তাই দর্শকের স্বস্তির জন্য, বিনোদনের জন্য সিনেমা হলেরও উন্নয়ন প্রয়োজন। ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার, মধুমিতা, বলাকা, শ্যামলী কিংবা অভিসারের মতো বিভাগীয় ও জেলা শহরেও দর্শকরা উন্নত সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখতে চান এখন।

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ