১৯শে মে, ২০২৫ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

‘এনআরসি’ ইস্যুতে যে কারণে নীরব ভূমিকায় শাহরুখ-আমির।। মাদারল্যান্ড নিউজ

মাদারল্যান্ড নিউজ ডেস্ক: কিছুদিন আগেও এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতায় উত্তাল ছিল ভারত। প্রতিবাদের আগুন ধিকধিক করে জ্বলতে জ্বলতে যখন লেলিহান শিখার রূপ নেয়, তখনও তারা চুপ। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে মুখোশ পরিধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনাও। প্রথমে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আর দিন কয়েক আগে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ)। জামিয়া মিলিয়ার প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে কি শাহরুখ খানের অনেক আগেই মুখ খোলা উচিত ছিল? নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের অনশন মঞ্চে যেভাবে আমির খান হাজির হয়েছিলেন, এবার তার দেখা নেই কেন? চারদিকে যখন শাহরুখ-আমির ভক্তদের মধ্যে এমন প্রশ্ন তখন তার একটা কারণ উদঘাটন করেছেন পরিচালক অনুভব সিংহ। ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর, প্রতিটি ‘কেন’র উত্তর জমা রয়েছে ইতিহাসের গর্ভে। সালটা ২০১৫। মোদি সরকারের দাপট আস্তে আস্তে প্রকট হয়ে উঠছে তখন। এম এম কালবুর্গী, গোবিন্দ পানসারের হত্যার পরে বিশিষ্টজনেদের একাংশ রাষ্ট্রীয় সম্মান ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই আবহে টুইটার আয়োজিত এক সভায় শাহরুখ বলেছিলেন, ‘‘দেশে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। মাংস খাওয়া নিয়ে আমরা একটা ইস্যু তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু সেটা ইস্যু নয়। ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশে দেশপ্রেমের নামে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা অপরাধের শামিল…’’ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর চেয়ে স্পষ্টভাবে আর কি প্রতিবাদ হতে পারে? কিন্তু এর ফল কী হয়েছিল? সোশ্যাল মিডিয়ায় শাহরুখের মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা, বিজেপি নেতাদের শাহরুখকে ‘পাকিস্তানি এজেন্ট’ বলে কটাক্ষ…’’ ঘটনাপ্রবাহ এমন মোড় নেয় যে, তাঁর মন্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে বলে শাহরুখকে বিবৃতি দিতে হয়। প্রায় সমসময়েই এক বিতর্কসভায় ‘অসহিষ্ণুতা’ প্রসঙ্গে বক্তব্য রেখেছিলেন আমির খান, ‘‘কিরণ (আমিরের স্ত্রী) প্রায়ই আমাকে বলে, দেশে যেভাবে অসহিষ্ণুতা বেড়ে চলেছে, তাতে কি আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত? বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ও ভয় পায়…’’ এরপর আমিরের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন ক্ষমতায় থাকা কয়েক জন নেতা। গত কয়েক দিনে শাহরুখ-আমিরের ‘অসহিষ্ণুতা’ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য মনে করিয়ে দিয়েছেন পরিচালক অনুভব সিংহ। খানেদের নীরবতার পিছনের কাহিনী বোঝানোর চেষ্টা করছেন ‘আর্টিকল ফিফটিন’-এর পরিচালক। একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘যখন অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে মুখ খোলায় গুজরাটে শাহরুখের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছিল, তখন সরকার কী করেছিল? মিস্টার মোদিকে জিজ্ঞাসা করুন, উনি জেএনইউ নিয়ে কী ভাবছেন…’’ খানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পরিচালক কবির খানও। শাহরুখ-আমির আগে প্রতিবাদ করলেও, সালমান খান এই ধরনের বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে সচেতন দূরত্ব বজায় রেখেছেন। গত বছর মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শাহরুখ-আমির এক ফ্রেমে ধরা দিলেও সেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি সালমানকে। দেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টারের ট্যাগ থাকায় যে কোনও বিষয়ে তিন খানের প্রতিক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁরা সেটা জানেন, বোঝেনও। কিন্তু মন্তব্য করার পরেও তাঁদের যে ধাক্কা পোহাতে হয়েছে, তাতে বোধহয় নিরবতাকেই অস্ত্র বানাতে বাধ্য হয়েছেন তারা। শাহরুখই একবার বলেছিলেন, ‘‘বাক্‌স্বাধীনতায় নীরব থাকার অধিকারও রয়েছে। আমি এরপর নীরবই থাকব। ’’

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ