সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার: আগামীকাল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) আম বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর কহর দরিয়া খ্যাত তুরাগ নদের তীরে শুরু হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ ৫৫তম ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরই মধ্যে প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাবলিগ জামাত অনুসারি মুসল্লিরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হচ্ছেন। ইজতেমাকে সামনে রেখে এখন লাখও মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে তুরাগ নদের পূর্বতীর। মুসল্লিদের আগমন উপলক্ষে শিল্পনগরী টঙ্গী সেজেছে নতুন সাজে। অসংখ্য মুসল্লির পদচারণায় যেন ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। শুক্রবার অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি রোববার জোহরের নামাজের পূর্বে যে কোন এক সময় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। এরই মধ্যে ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৬০ একর জমির ওপর নির্মিত প্যান্ডেলের কাজ, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, তাশকিল কামরা, হালকা নম্বর বসানো, দৈর্ঘ্যে ৪০ ফুট প্রস্থে ২৬ ফুট বয়ান মঞ্চ নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। ৫৫তম ইজতেমার প্রথম ধাপে ৮৭টি খিত্তাসহ ৬টি সংরক্ষিত খিত্তা স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সকল জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিসহ বিদেশী মেহমান ইজতেমায় অংশ নিবেন। আগত মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো মাঠে শব্দ প্রতিধ্বনি রোধক প্রায় ২৪০টি বিশেষ ছাতা মাইক, ৫০টি ইউনিসেফ মাইকসহ ৪৮০টি মাইক স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদীতে ৭টি ভাসমান পন্টুন সেতু নিমার্ণ করেছেন। এছাড়াও আর্ন্তজাতিক নিবাসে মেহমানদের রান্না-বান্নাসহ আভ্যন্তরিন মুসল্লিদের জন্য আশপাশের এলাকায় স্থাপিত বিভিন্ন হোটেল রেস্তোয়ায় বিশেষ নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। যাতে তাদের ফুড পয়জনিং না হয়। ইজতেমার নিয়ম অনুসারে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বয়ান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার ইজতেমার দায়িত্বে নিয়োজিত মুসল্লিদের উদেশ্যে বিশেষ বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. রবিউল হক। আগত মুসল্লিরা যাতে কষ্ট না পায়, তাদের যাতে কোন প্রকার সমস্যা না হয় সে দিকে নজর রাখার জন্য তিনি ইজতেমার দায়িত্বে নিয়োজিত মুসল্লিদের আহবান জানান।
গাজীপুর সিটি করপোরেনের নেওয়া কার্যক্রম :
গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দেশী-বিদেশী মুসল্লীদের অভিনন্দন ও স্বাগত জানানোর জন্য ১৫টি তোরণ নির্মাণ করেছেন। ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের ওজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্যে ইজতেমা ময়দানে ১৩টি গভীর নলক‚পের দ্বারা ১৮.৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩ কোটি ৫৫ লাখ গ্যালন সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হঢেছে। বহুতলীয় দালানে প্রায় ৮ হাজার ৩৩১টি স্থায়ী, ৪০০টি অস্থায়ী ও বিদেশী মেহমাদের জন্য ১৭৫টি টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। এদের মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্থ অজু গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে।এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে ইজতেমাস্থলের আশপাশে প্রায় ২ হাজার কাঁচা অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ৬০০ ড্রাম বি¬চিং পাউডার ও ২ হাজার লিটার কেরোসিন সরবরাহ করা হয়েছে। ৬০টি ফগার মেশিনে মশক নিধনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তুরাগ নদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে নৌযান চলাচল বন্ধের লক্ষে টঙ্গী ব্রিজ ও কামাড়পাড়া ব্রিজের নিচে বাঁশ দ্বারা ৩টি নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে।ইজতেমাস্থল ও আশপাশের এলাকায় মুসল্লিদের চলাচলের জন্য ৭৫০টি বৈদ্যুতিক বাতি, ১০১টি ল্যাম্পপোস্টের মাধ্যমে ৫০০টি সড়ক বাতি লাগানো হয়েছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৪৫টি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা চলাকালে প্রতিদিন ৬০টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত বর্জ্য অপরাসণ কার্যক্রম চালানো হবে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রাস্তার উপর পার্কিং করা গাড়ি সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিনেমা হলগুলো বন্ধ এবং ইতিমধ্যে রাস্তার দুই পাশে দেয়ালের আপত্তিকর পোস্টার অপসারণ করা হয়েছে।ইজতেমা মাঠের চারপাশের রাস্তার ধূলাবালি নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানোর জন্য সিটির এর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ইজতেমাস্থল ও আশপাশের সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করার লক্ষে ৮টি কন্ট্রোল রুম, পুলিশের জন্য ১৫টি ও র্যাবের জন্য ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা ময়দানের চার পাশের সকল অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যেগুলো বাকি রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। এসব বিষয় মনিটরিং করার জন্য সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারির সমন্বয়ে ১৪টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে একটি বিশেষ সূত্র জানায়, ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতৃবৃন্দ ইজতেমা ময়দানের উত্তরে নিউ মন্নু টেক্স্রটাইল মিলস প্রাঙ্গণ, নিউ অলিম্পিয়া, হোন্ডা রোড, আইআরআই রোড এলাকায় অস্থায়ী ভাবে বাজার বসিয়ে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা ভিট প্রতি নগদ, ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা প্রতিদিন ভাড়ায় বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রীর দোকানপাট বসিয়েছে। এছাড়াও হারবাল, ইউনানী ও কবিরাজী দাওয়াখানার নামে নকল ঔষধ বিক্রেতা একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ বালাই ভালো করার দোহাই দিয়ে ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের সরলতার সুযোগে প্রতারণাা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে। প্রতি বছর ইজতেমাস্থলের চতুর্পাশে এদের দৌরাত্ম লক্ষ করা যায়। এগুলো বন্ধ করতেও দাবি জানিয়েছেন ইজতেমা পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ। ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। ৫ সেক্টরে ভাগ করে ৫ স্তুরের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি স্তর বা সেক্টরের দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই দুই পর্বের ইজতেমায় পুলিশ, র্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ ৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৪ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের করা হয়েছে। ২০টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হচ্ছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাগুলো। এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার, নাইটভিশন গগল্স, পুলিশ ও র্যাবের ষ্ট্রাইকিং ফোর্স, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, নৌ টহল, হেলিকপ্টার টহল, মুসলিল্লদের খিত্তাওয়ারী মোটরসাইকেল টহল ও বিশেষ নিরাপত্তা যন্ত্র আর্চওয়ে। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করবেন। তারা কোন প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সিগনালের মাধ্যমে সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের তৎক্ষণিক অবহিত করবেন। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে ১৫টি ও র্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, ১১টি চেক পোস্ট, হেলিকপ্টার উঠা-নামার জন্য ২টি পয়েন্টে হ্যালিপ্যাড ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং এর জন্য একটি প্রধান কন্ট্রোল রুম ও ৮টি সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও তারা ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে প্রত্যক্ষ করার জন্য ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষণিক নজর রাখবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র্যাবের ১০টি ও পুলিশের ১৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করবেন। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের প্রতি পুলিশের আহবান : ১০ থেকে ১২ এবং ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি দুইপর্বে অনুষ্ঠিতব্য ইজতেমায় আগত মুসল্লিদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্তকর্তামূলক আহবান জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক মুসল্লিদেরকে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান, অপরিচিত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং কোনো পোঁটলা, ব্যাগ বা সন্দেহজনক বস্তুর দেখামাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে করা, টাকা বা মূল্যবান সামগ্রীসহ একাকী বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাফেরা না করা, সব সময় টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী নিজ হেফাজতে রাখা, হকার ও ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে খাদ্য বা পানীয় পান না করে স্থায়ী দোকানের খাবার খাওয়া, টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি বা খোয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ বা র্যাবকে জানানো জন্য আহবান করা জানানো হয়েছে। মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম : ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রথম পর্বে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক ডা. মাসুদ রানা বলেন, মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, হৃদরোগ ইউনিট, বক্ষব্যাধি- এ্যাজমা ইউনিট, ট্রমা (অর্থোপেডিক) ইউনিট, বার্ণ ইউনিট, স্যানিটেশন টিম এবং ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও চক্ষু, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ : ইজতেমা মাঠের উত্তরপার্শে নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলের মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে ১০ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের মোনাজাতের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়দানে আসা অসুস্থ মুসল্লিদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বিতরণ করবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এছাড়াও হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ, ইবনে সিনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, র্যাব, জেলা প্রশাসনসহ ৪৫টি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাদের স্টলে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করবে। ইজতেমায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা : টঙ্গী ডেসকো সূত্রে জানা যায়, ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে বরাবরের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে করে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫টি ১১ কেভি ফিডার লাইন ও ১৯টি বিতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। হঠাৎ কোন কারণে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়লে সাথে সাথে যাতে বদল করা যায় তার জন্য স্ব-স্ব স্থানে ৪টি সাব স্টেশন ও ৫ টি ট্রলি ট্রান্সফরমার রাখা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসাবে ৪টি জেনারেটর সব সময় প্রস্তুত থাকবে। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের জোন-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো.মানিকুজ্জামান জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। সেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ার ফাইটাররা অবস্থান করবেন। ৬টি টু-হেলার মোটর সাইকেল টহল, ১৪ টি ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, একটি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট, ৬টি মোবাইল জেনারেটর, প্রতি খিত্তায় ২জন ফায়ারম্যান থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ৩ টি পানিবাহী গাড়ী, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, ৩টি অ্যাাম্বুল্ন্সে, একটি রেসকিউ বোর্ড, একটি রেসকিউ গাড়ী ও ২টি ফায়ার এক্সিট্রিম হুইসার থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের ২০ জন কর্মকর্তাসহ ২৫০ কর্মী সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবে। বিশেষ ট্রেন ১৬টি : টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের ষ্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের নির্বিঘেœ যাতায়াতের জন্য ১৬টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা অভিমুখী সব ট্রেন ৫মিনিট পর্যন্ত টঙ্গী ষ্টেশনের দাঁড়াবে। সাপ্তাহিক বন্ধের সকল ট্রেনও ওই সময়ে চলাচল করবে। এছাড়াও প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন কার হচ্ছে। বিআইডবিøউটিএ ও জেলা প্রশাসনের আহবান : কামারপাড়া হতে সূইচগেট পর্যন্ত তুরাগ নদের সীমানা পিলার থেকে ১৫০ ফুটের মধ্যে গড়ে তোলা সকল ধরনের অবৈধ স্থাপনা ইতিমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। অবশিষ্টদেরও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন। ময়দানে খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান : এবছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো-গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২,৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫-১৯ ও ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩২), রাজশাহী (খিত্তা-২০), নওগাঁ (খিত্তা-২১), নাটোর (খিত্তা-২২), চাপাই নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২৩), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৬), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩০), নড়াইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩৩), নীলফামারী (খিত্তা-৩৪), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৩৫), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৬), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৭), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৩৮), মাগুরা (খিত্তা-৩৯), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৪০), বগুড়া (খিত্তা-৪১), নারায়নগঞ্জ (খিত্তা-৪২), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৩), যশোর (খিত্তা-৪৪), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৫), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৬), নরসিংদী (খিত্তা-৪৭), ভোলা (খিত্তা-৪৮), জামালপুর (খিত্তা-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৫০, ৫১), মেহেরপুর (খিত্তা-৫২), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৫৩), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৪), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৫), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৬), বরিশাল (খিত্তা-৫৭), রাজবাড়ি (খিত্তা-৫৮), শেরপুর (খিত্তা-৫৯), শরীয়তপুর (খিত্তা-৬০), মাদারীপুর (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৩), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৬৪), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৬৫), সুন্দরবন (খিত্তা-৬৬), ফেণী (খিত্তা-৬৭), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৮), ল²ীপুর (খিত্তা-৬৯), চাঁদপুর (খিত্তা-৭০), বি.বাড়ীয়া (খিত্তা-৭১), খুলনা (খিত্তা-৭২), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৩), বরগুনা (খিত্তা-৭৪), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৬), পিরোজপুর (খিত্তা-৭৭), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৭৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৮০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৮১), পাবনা (খিত্তা-৮২), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা-৮৪), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৫), জয়পুরহাট (খিত্তা-৮৬), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৮৭)। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর-এর খিত্তাগুলোর অবস্থান তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে। এছাড়াও ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২ ও ১৫(খ) নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন। ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ সংগঠক প্রকৌশলী মো. মাহফুজ হান্নান জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতির কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি টুকিটাকি যা আছে তা সকালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিরা ময়দানে নিজ নিজ খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। ইজতেমার আয়োজক তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ঠ সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে আলমী শূরার তত্তাবধানে আয়োজিত তিনদিনের ইজতেমা। তিনি আরও জানান, আগত ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকার এক শ্রেণির পাইকারী মজুদদার ব্যবসায়ীরা দ্বিগুন অর্থ উর্পাজনের প্রত্যাশায় কাঁচা তরকারিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি করে বাজারজাত করছে। ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বীরা এসব কালো বাজারী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নাটোর থেকে আসা আ. রশীদ (৬০) বলেন, ইজতেমায় অংশ নিতে পারলে নিজেকে পূণ্যবান মনে হয়, তাই যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিনই ইজতেমায় অংশ নিবো। কাজাখিস্তান থেকে আসা বিদেশি মুসল্লি মো. ডেনিবেক জানান, আল্লাহকে রাজি, খুশী করার জন্যই ইজতেমায় এসেছি। টঙ্গী ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, ১০ জানুয়ারি ইজতেমা শুরু হলেও বুধবার থেকেই দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন।টঙ্গী মডেল থানার অফিসার মো. কামাল হোসেন জানান, টঙ্গীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই রোধসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ এবং এলাকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার জানান, টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি প্রতিবারের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণ ভাবে বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন হবে। গাজীপুরের জেলাপ্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, ইজতেমা শুরুর আগের দিন থেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পঁচাবাসি খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণসহ তাদের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বেশ কয়েকটি মোবাইল কোর্ট কাজ করবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নিরাপদ পরিবেশে ইজতেমা আয়োজনে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী থাকবে। এ বারের ইজতেমায় সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য থাকবে তার সাথে ৫ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া এবার ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন হবে। তিনি আরও বলেন, রাস্তায় কোন দোকান বসতে পারবেনা। ইতিমধ্যে ফুটপাত ও রাস্তার সব দোকান উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম এ প্রতিনিধিকে জানান, টঙ্গীর ইজতেমার সকল কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে ইজতেমার প্রস্তুতিসহ এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, ইজতেমা মাঠে যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তার দু’পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা, দোকানপাট উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা, মশক নিধন, আপত্তিকর পোস্টার ব্যানার অপসারণসহ অন্য কাজ রয়েছে।
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদপ্রকাশক ও সম্পাদক: মাহবুব আলম জুয়েল
(প্রতিনিধি, এশিয়ান টেলিভিশন)
সহ- প্রকাশক: এমদাদুল হক মন্ডল
সহ- সম্পাদক: আশরাফুল ইসলাম রনজু
নির্বাহী সম্পাদক: সাহিন সরকার রনজু
সহ বার্তা সম্পাদক: হাফিজুর রহমান কিয়াস
উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যবৃন্দ :
(১) অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম (২) প্রভাষক রাকিবুল সরকার পাপুল (৩) প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ (৪) ডাক্তার মিজানুর রহমান (৫) সহকারি শিক্ষক আব্দুল বারী
আইন উপদেষ্টা: এ্যাডভোকেট রায়হান কবির (সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর, রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালত)
-: যোগাযোগ :-
তানোর অফিস: রাফি কম্পিউটার্স, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে, মুন্ডুমালা রোড, তানোর, রাজশাহী।
রাজশাহী অফিস: মা কম্পিউটার, লোকনাথ স্কুল মার্কেট, হেতেমখাঁ, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।
ফোন: ০১৭১১-২৭০৪৩৩, ০১৫১৭-০৬৩১১৭
Email: mnewsbd24.2018@gmail.com
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া সকল ধরনের সংবাদ সারা বিশ্বে প্রচারে আমাদের তথ্য দিন।
আপনার প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে পরিচিত করতে বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।