১৯শে মে, ২০২৫ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

যার জন্ম হয়নি তাকে নিয়ে এসেছেন, দুদক কর্মকর্তাকে আদালত

মাদারল্যান্ড নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ বিমানের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ১১৮ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় দুই আসামির জামিন শুনানিতে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকারকে ভর্ৎসনা করেছেন আদালত। নন সিডিউল ক্যাটাগরি বিষয়ে তাকে ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘যার জন্ম হয়নি, তাকে আপনি নিয়ে এসেছেন?’
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র দায়রা ও বিশেষ জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ ভর্ৎসনা করেন।
মামলাটিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগ) সাবেক পরিচালক আলী আহসান বাবু ও উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ইফতিখার হোসেন চৌধুরী গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হন। ওইদিন তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
গত বুধবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র দায়রা ও বিশেষ জজ তাদের পক্ষে আংশিক জামিন শুনানি করেন। ওইদিন আদালতের চাহিদা মতো দুদক প্রসিকিউটর ডকুমেন্ট সরবরাহ করতে না পারায় আজ বৃহস্পতিবার অধিকতর শুনানির দিন ধার্য করেন।
দুপুর ২টায় ফের শুনানি শুরু হয়। আসামিদের পক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান শুনানি করেন। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। শুনানির সময় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান সরকার আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষে সৈয়দ রেজাউর রহমান অভিযোগ করেন, মামলায় নন সিডিউল কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু সিডিউল ও ননসিডিউল ক্যাটাগরি নির্ধারণ হয়েছে ২০১৮ সালের সার্কুলার অনুযায়ী। তার আগে তো নন সিডিউল ক্যাটাগরি ছিলই না। ২০০৮ সালের পর ২০১৮ সালে নতুন সার্কুলার হয়। তাই সেখানে নন সিডিউল কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দুর্নীতি কীভাবে হবে? শুধু হয়রানি করার জন্য এ মামলা হয়েছে।
জবাবে দুদক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘২০০৮ সালের পর ২০১২ সালেই একটি সার্কুলার হয়। সেখানে সিডিউল ও নন ডিডিউল ক্যাটাগরিতে মালামাল পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কিন্তু আসামিরা ২০১২ সালের নন সিডিউল ক্যাটাগরিতে ভাড়া আদায় করে ২০০৮ সাল অনুযায়ী তা জমা দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়ে রাষ্ট্রের ১১৮ কোটি টাকা ক্ষতি করেছেন। ১১৮ কোটি টাকা ক্ষতি এটা প্রথমিক ধারণা, বাস্তবে ক্ষতির পরিমান ৪০০ কোটি টাকার বেশি হবে।’
তখন বিচারক দুদক প্রসিকিউটরকে বলেন, ‘২০১২ সালের সার্কুলার দেখান।’ তিনি সরাসরি কোনো সার্কুলার দেখাতে না পেরে, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, ‘এর মধ্যে বিষয়টি বলা আছে।’ এ ছাড়া যদি নাই থাকবে তবে তাদের অফিস ২০১৭ সালে ২০১২ ক্যাটাগরি অনুযায়ী চার্জ নেওয়ার জন্য আমানত শাহ বিমানবন্ধরে কীভাবে লিখলেন। ওই সংক্রান্তে একটি ডকুমেন্টও তিনি আদালত উপস্থাপন করেন।
প্রসিকিউটর ২০১২ সালের সরাসরি কোনো সার্কুলার না দেখাতে পরায় আদালতে উপস্থিত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকারকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি যে মামলায় বলেছেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আসামিরা নন সিডিউল ক্যাটাগরির কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ১১৮ কোটি টাকা দুর্নীতিরা মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। আমাকে আপনি ২০১২ সালের সার্কুলার দেখান। তখন তো নন সিডিউল ক্যাটাগরির জন্মই হয় নাই। আপনি কীভাবে লিখলেন?’
তখন আতাউর রহমান সরকার প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীরের মতো ডকুমেন্ট তুলে ধরলে বিচারক বলেন, ‘এতে কাজ হবে না। ২০১২ সালের সরাসরি সিডিউল ও নন সিডিউল ক্যাটাগরিতে ভাগ করা ছিল দেখান।’ না দেখাতে পারায়, তখন বিচারক বলেন, ‘যার জন্ম হয়নি, তাকে আপনি নিয়ে এসেছেন। আমি আপনার বিরুদ্ধে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখব, শুধু শুধু মানুষকে হয়রানি করেন। একচুলও ছাড় পাবেন না।’
এ সময় প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার কাছে একটি ডকুমেন্ট আছে, সেটা অস্পষ্ট। সময় দিন। তখন বিচারক আগামী সোমবার ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেন।’
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ১১৮ কোটি ৪ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিসাধনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার দুদক উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন মামলা করেন। এরপরই মোহাম্মদ আলী আহসান ও ইফতেখার হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে দুদক।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বিমানের কার্গো শাখার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আরিফ উল্লাহ, ১৩ সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম (বর্তমানে কান্ট্রি ম্যানেজার দাম্মাম, সৌদি আরব), আমিনুল হক ভূঁইয়া (বর্তমানে রিজিওনাল ম্যানেজার রিয়াদ, সৌদি আরব), লুতফে জামাল, মোশাররফ হোসেন তালুকদার, রাজীব হাসান, নাসির উদ্দিন তালুকদার, অনুপ কুমার বড়ূয়া, কেএন আলম, ফজলুল হক, সৈয়দ আহমেদ পাটওয়ারী, মনির আহমেদ মজুমদার, এ কে এম মঞ্জুরুল হক ও মো. শাহজাহান।
মামলায় অভিযোগ, ২০১২ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ননশিডিউল ফ্রেইটারের মাধ্যমে কার্গো ও মেইল পরিবহনের ক্ষেত্রে শিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে আদায়যোগ্য চার্জের অতিরিক্ত হিসেবে প্রতি কেজির জন্য নির্ধারিত হারে চার্জ আদায় করা হবে। মোট ৪ হাজার ১১৫টি নন শিডিউল ফ্রেইটার সর্বমোট ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কেজি কার্গো ও মেইল পরিবহন করে। যার মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪ মার্কিন ডলার বা ১১৮ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ হয়।

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ