১৯শে মে, ২০২৫ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

রাজশাহী পলিটেকনিক অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিল ছাত্রলীগ


জামি রহমান,নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাসে উপস্থিত না থাকা এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় দু’জন শিক্ষার্থীকে ফাইনাল পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সুযোগ না দেয়ায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদকে পুুকুরে ফেলে দিয়েছে ছাত্রলীগ। শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে পলিটেকনিক ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। সাঁতরে কিনারে এলে আশপাশের কয়েকজন অধ্যক্ষককে পুকুর থেকে উদ্ধার করেন। অধ্যক্ষের অভিযোগ, তাকে হত্যা করতেই পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছিল। ঘটনার পর থেকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় নগরীর চন্দ্রিমা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। রাতের মধ্যেই অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে রবিবার থেকে টানা কর্মবিরতি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক ও কর্মচারীরা। শনিবার সন্ধ্যায় জরুরি সভা করে তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়।
অধ্যক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কম্পিউটার বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন অধ্যক্ষের সাথে তার কার্যালয়ে দেখা করে। এসময় তারা দু’জন শিক্ষার্থী যারা নিয়মিত ক্লাস করেনি এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তাদের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ দেয়ার দাবি জানায়।
অধ্যক্ষ তাদের কথা শুনে বলেন, কারিগরী শিক্ষায় ৭৫ ভাগ ক্লাস না করলে এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষায় অংশ না নিলে ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। অধ্যক্ষ তাদের কথায় রাজি না হয়ে বিষয়টি নিয়ে তাদের বিভাগীয় প্রধানদের সাথে কথা বলতে বলেন। অধ্যক্ষের কথা শুনে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের দলীয় টেন্টে গিয়ে জড়ো হয়।দুপুর দেড়টার দিকে অধ্যক্ষ জোহরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে তার নিজ কার্যালয়ে ফিরছিলেন। এসময় কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজনজন নেতাকর্মী অধ্যক্ষকে রাস্তা থেকে তুলে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। অধ্যক্ষ সাঁতার কেটে কিনারে এলে আশপাশের কয়েকজন তাকে উদ্ধার করেন।
ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কামাল হোসেন সৌরভ কমিউপটার বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র এবং পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রিগানের ঘনিষ্ট হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এর আগে দুটি পরীক্ষায় রেফার্ড পেয়েছেন তিনি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র তার সাথে দেখা করে দু’জন ছাত্রের ফরম ফিলাপের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানায়। তিনি এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানের সাথে যোগাযোগ করার কথা বললে তারা তার সাথে দুর্বব্যবহার করে। অধ্যক্ষ বলেন, কিছু ছাত্র নিয়মিত ক্লাস করে না এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষায়ও অংশ নেয় না। অথচ তাদের অভিভাবকেরা জানে তাদের সন্তানরা নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আমার সাথে দেখা করতে আসা ছাত্রদের আমি বলেছিলাম, যাদের ক্লাস এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষা নিয়ে সমস্যা আছে, তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে এলে তাদের ফরম ফিলাপের সুযোগ দেযা হবে। কিন্তু তারা আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্যই পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। অধ্যক্ষ বলেন, পুকুরে বাঁশ পোতা ছিল। আমি ধারালো সেই বাঁশে পড়ে গেলে কিংবা সাঁতার না জানলে আমি হয়তো মরেই যেতাম।
রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ রহমান এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জানান, ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনার সময় শহরের বাইরে ছিলেন দাবি করে রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন বলেন, মোবাইল ফোনে ঘটনা শোনার পরপরই আমি দলীয় নেতাকর্মীদের অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তারা গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমরা অধ্যক্ষকে বলেছি। আর সিসিটিভি’র ফুটেজ দেখে এবং তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত কামাল হোসেন সৌরভ তার ঘনিষ্ট হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত, এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিগেন বলেন, আমি যেহেতু পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সেখানকার ছাত্রলীগের এ থেকে জেড পর্যন্ত সব নেতাকর্মীই আমার ঘনিষ্ট।জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ওসি শেখ মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Download
Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ