সর্বশেষ সংবাদ
মাদারল্যান্ড নিউজ ডেস্ক: প্রাথমিক স্তরে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে, বাড়ছে ইবতেদায়িতে। গত পাঁচ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) শিক্ষার্থী কমেছে ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। একই সময়ে ইবতেদায়ি সমাপনীতে শিক্ষার্থী বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাথমিক বা সাধারণ ধারার শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের একাংশের অনাগ্রহ বাড়ছে, তারা ঝুঁকছেন ধর্মীয় শিক্ষার দিকে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকে এবার ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৭ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৫ জন শিক্ষার্থী কম। অন্যদিকে ইবতেদায়িতে অংশ নিয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৭১ জন। গতবারের তুলনায় ৩০ হাজার ৯৮৩ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে এখানে। গত চার বছরের পরিসংখ্যানও বলছে একই কথা।
২০১৫ সালে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৯,৫০,৭৬৪ জন শিক্ষার্থী আর ইবতেদায়ির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৩,০৬,১৯৬ জন। ২০১৬ সালে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৯, ৩৪,০৮৭ জন শিক্ষার্থী আর ইবতেদায়ির সমাপনীতে অংশ নিয়েছিল ৩, ০০, ৬৭১ জন। ২০১৭ সালে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৮, ০৬, ০৯৬ জন আর ইবতেদায়ির সমাপনীতে অংশ নিয়েছিল ২, ৯৪,৩৮১ জন। ২০১৮ সালে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৭, ৭৬, ৮৮২ আর ইবতেদায়িতে অংশ নিয়েছিল ৩,১৯,৩৮৮ জন।
প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমার যুক্তি হিসাবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে তাই স্কুল পড়ুয়ার সংখ্যাও কমছে। তবে শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা মনে করছেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থী কমা আর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
তারা বলছেন, বিগত কয়েক বছরে প্রাথমিকে শিক্ষার ব্যয় বেড়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ সন্তানদের পড়াশোনার ব্যয় সঙ্কুলান করতে পারছেন না। মাদ্রাসা শিক্ষায় তুলনামূলক কম ব্যয় হওয়ায় তারা সন্তানদের শিক্ষার জন্য সেখানে পাঠাচ্ছেন। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বৃদ্ধির আর যে কারণ তারা চিহ্নিত করছেন সেটা হলো, গত এক দশকে বাংলাদেশের সমাজে ধর্মীয় চিন্তার প্রসার ঘটেছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের যে পরিসংখ্যান তাতে উদ্বেগের কিছু এখনো হয়নি বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তপন মাহমুদ লিমন বলেন, পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে প্রাথমিকে কমেছে দুই লাখ ২৩ হাজার শিক্ষার্থী, মাদ্রাসায় বেড়েছে ৩০ হাজার। ধরে নিলাম সাধারণ শিক্ষা থেকে মাদ্রাসায় এই ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এসেছে। বাকি এক লাখ ৯০ হাজার কোথায় গেল? পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইংরেজি মাধ্যমেও শিক্ষার্থীর হার বেড়েছে। তিনি বলেন, মফস্বল এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে মাদ্রাসা মাধ্যমের অনেক কিন্ডারগার্টেন গড়ে উঠছে, এগুলোর প্রচার-প্রচারণাও বেশি। বাড়তি সুবিধার কারণে অনেক অভিভাবক হয়তো সে দিকে ঝুঁকছে।
তপন মাহমুদ লিমন বলেন, এই পরিসংখ্যান দিয়েই আমরা বলে দিতে পারব না সমাজে মেরুকরণ ঘটছে। এটা খুব সহজে বলা সম্ভব না। বাংলাদেশ যেহেতু মুসলিম প্রধান দেশ, অনেকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাইবে, এটাও স্বাভাবিক। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারিনি।
এ বিষয়ে সমাজকর্মী খুশী কবির বলেন, প্রাথমিক স্তরে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী কমেছে। অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেড়েছে। দুটো কারণে এমনটা হতে পারে। এক. মাদ্রাসা শিক্ষা এখনো খুব বেশি বাণিজ্যিক হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি বাণিজ্যিক। অভিভাবকরা খরচ বাঁচাতে সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন। এর পেছনে আরেকটা কারণও থাকতে পারে। সব কিছুতে কিছু গোষ্ঠী ধর্মীয়করণের চেষ্টা করছে। গ্রামে আগে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন হতো, সেটা এখন দখল করে নিয়েছে ওয়াজ মাহফিল। এসব কারণে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে অভিভাবকদের। খুশী কবির বলেন, এভাবে একটা প্রজন্ম ধর্মীয় মৌলবাদে আক্রান্ত হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি হবে।
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, বলা হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসার দিকে সমাজের একটা অংশ ঝুঁকছে। মূল ধারার শিক্ষার ওপর আস্থা কমছে-এটা আমি বিশ্বাস করি না। মূলধারার চেয়ে মাদ্রাসা ভালো এটার কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। এখানে একটা মূল কারণ সবার দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে, সেটি হলো মাদ্রাসায় ফ্রি লেখাপড়া। লিল্লাহ বোর্ডিং আছে। যতই বলা হোক মূল ধারার শিক্ষা পুরোটাই সরকারি। ফ্রি বই। কিন্তু পরীক্ষাভিত্তিক এ সিস্টেমে অভিভাবকদের যে কত খরচ যায় সেটা আমরা দেখিয়েছি। সরকারি খরচ নেই কিন্তু নানা ধরনের চার্জ করে স্কুল। এর ওপর কোচিং, নোটবই, খেলাধুলা, পিকনিক, অমুক দিবসের জন্য ফি-খরচের বহর বাড়তেই থাকে।
তিনি বলেন, যেখানে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ কম থাকে, সেখানে মানুষ বিকল্পের দিকে ঝুঁকবে। এটাই স্বাভাবিক, সস্তা বিকল্প। এর জন্য, প্রাথমিকে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। শিক্ষা কর্মসূচিতে রাষ্ট্রের অঞ্চলভিত্তিক বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মাহবুব আলম জুয়েল
(প্রতিনিধি, এশিয়ান টেলিভিশন)
সহ- প্রকাশক: এমদাদুল হক মন্ডল
সহ- সম্পাদক: আশরাফুল ইসলাম রনজু
নির্বাহী সম্পাদক: সাহিন সরকার রনজু
সহ বার্তা সম্পাদক: হাফিজুর রহমান কিয়াস
উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যবৃন্দ :
(১) অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম (২) প্রভাষক রাকিবুল সরকার পাপুল (৩) প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ (৪) ডাক্তার মিজানুর রহমান (৫) সহকারি শিক্ষক আব্দুল বারী
আইন উপদেষ্টা: এ্যাডভোকেট রায়হান কবির (সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর, রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালত)
-: যোগাযোগ :-
তানোর অফিস: রাফি কম্পিউটার্স, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে, মুন্ডুমালা রোড, তানোর, রাজশাহী।
রাজশাহী অফিস: মা কম্পিউটার, লোকনাথ স্কুল মার্কেট, হেতেমখাঁ, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।
ফোন: ০১৭১১-২৭০৪৩৩, ০১৫১৭-০৬৩১১৭
Email: mnewsbd24.2018@gmail.com
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া সকল ধরনের সংবাদ সারা বিশ্বে প্রচারে আমাদের তথ্য দিন।
আপনার প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে পরিচিত করতে বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।