১৯শে মে, ২০২৫ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

মেয়ের নগ্ন ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করতে চান পাষন্ড বাবা! মাদারল্যান্ড নিউজ

মাহবুবুজ্জামান সেতু,নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় এফিডেভিট করে বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন রজনী আক্তার (২১) নামে এক কলেজ ছাত্রী।

তিনি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতনী মাতোপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম এবং মৃত জুলেখা বানুর মেয়ে।

তিনি সান্তাহার সরকারি কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

তার নানার বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামে এবং নানার নাম মৃত মতিন প্রামাণিক।

গত রোববার (১৮ আগষ্ট) নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী হারুন অর রশীদ এবং নোটারী পাবলিক মো: সোলাইমান আলী চৌধূরী স্বাক্ষরিত ৩শ টাকার দলীলে এফিডেভিটের মাধ্যমে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

এফিডেভিট সূত্রে জানা যায়, রজনী আক্তারের মা জুলেখা বানু গত ২০০৭ সালে আলসার রোগে মারা যান।

তার মায়ের গর্ভের তিন সন্তান। তিনি সবার বড়। মা মারা যাওয়ার পর ছোটবোন জান্নাতুন তার চাচার কাছে প্রতিপালিত হচ্ছে।

ছোট ভাই বিজয় মুরগির ফিডের একটি দোকানে থাকে।

আর বাবা জাহাঙ্গীর আলম নতুন করে বিয়ে করে সংসার করছেন।

রজনী আক্তার ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়াশুনা অবস্থায় মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা লেখাপড়ার সব খরচ বন্ধ করে দেন।

প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় পড়াশুনা করে এসএসতিতে জিপিএ ৫ অর্জন করে।

টিউশনি করে নিজের খরচ চালাত। সেইসাথে বাবাকে সহযোগীতা করত। কিন্তু তার বাবার টাকার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাপ প্রয়োগ করা হয়।

এতে রাজী না হওয়ায় তার উপর চলত শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন।

নওগাঁ সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের প্রবাসী সৈকত আলী (৫৫) যিনি একাধিক বিয়ে করেছেন এবং ছেলে-মেয়ে আছে।

গত ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২দিন ওই ছাত্রীকে একটি ঘরে বন্ধ করে রেখে নির্যাতন করেন তার বাবা।

এরপর বৃদ্ধ সৈকত আলীর কাছ থেকে দু’দফায় ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ২৭ অক্টোবর জোর করে তার সাথে বিয়ে দেয়া হয়।

বিয়ের পর থেকে বাবা জাহাঙ্গীর আলম তার জামাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা দাবী করেন।

এ নিয়ে স্বামী তাকে গালিগালাজ ও মারপিট করত। ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষাও দিতে দেয়া হয়নি।

অপরদিকে, টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে বলে মেয়ের সংসার ভেঙে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়।

এছাড়া গোপনে মেয়ের নগ্ন ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল  করতে চান ওই লোভী পাষন্ড বাবা।

গত বছরের ৯ নভেম্বর মালেশিয়াতে যান স্বামী সৈকত আলী। এরপর স্বামীর বাড়ি থেকে রজনী আক্তার তার নানার বাড়িতে এসে মামাদের আশ্রয়ে রয়েছে।

প্রায় ১মাস হলে সৈকত আলী বাড়িতে আসছেন এবং রজনী আক্তারকে নিতে চান।

কিন্তু তিনি আর বৃদ্ধ স্বামীর সংসার করতে চাননা।

অপরদিকে বাবার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

রজনী আক্তারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার মেয়েকে কোন প্রকার নির্যাতন করিনি।

টাকা নিয়েও প্রবাসীর সাথে বিয়ে দেয়া হয়নি। মেয়ে নিজ থেকেই বিয়ে করেছে।

গত চারমাস থেকে মেয়ের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নাই।

এখন যদি এফিডেভিট করে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাহলে আর কি করার।

রজনী আক্তারের স্বামী সৈকত আলী বলেন, মেয়ের বাড়িতে ঘটক পাঠিয়ে প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করেছি।

বিয়েতে ১ লাখ টাকা মোহরানা বাধা হয়েছিল। সে সময় নাক ও কানের সোনার জিনিস দেয়া হয়েছিল।

আমি বিদেশ যাওয়ার পর চিকিৎসার নাম করে স্ত্রী রজনী আক্তার বাড়ি থেকে স্বর্নালংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।

দেশে আসছি প্রায় ১মাস হলো। স্ত্রীর সাথে কোন যোগাযোগ নাই।

এখন স্ত্রী যদি ভাত খেতে চাই দিবো, এতে আমার কোন আপত্তি নাই। তবে মেয়ের বাবা চিটার প্রকৃতির মানুষ বলেই জানি।#

প্রকাশিত: মাহবুব আলম জুয়েল

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ