১৯শে মে, ২০২৫ ইং, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

চালের বাজারে সিন্ডিকেটের হাত!

মাদারল্যান্ড নিউজ ডেস্ক: শস্যভাণ্ডার বলে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বর্তমানে চলছে আমন ধান কাটা-মাড়াই। তবে উঠানভরা ধানেও স্বস্তিতে নেই কৃষক। হাড়ভাঙা পরিশ্রমে উৎপাদিত ধানের দাম না থাকলেও বাজারে বেড়েছে চালের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম প্রতি কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। আর বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে জিরাশাইল ও ব্রি-২৮ জাতের ধানের সরবরাহ কমায় চালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া মিল মালিকরা কম দামে ধান কিনে মজুদ করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন হয়েছে। এখন বেশির ভাগ মানুষই মোটা চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত নয়। বাসা-বাড়ি, ছাত্রাবাস, হোটেল সবখানেই চিকন চালের ভাতের চাহিদা বেশি। বর্তমানে মোটা ও চিকন চালের দামের পার্থক্য সামান্য হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষই চিকন চাল কিনছেন। এ কারণে বাজারে চিকন চালের সংকট দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা চাল এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। খুচরা বাজারে চিকন চালের দাম ৩৬ টাকা থাকলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা।
রংপুর সিটি বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, কদিন আগে জিরাশাইল জাতের চিকন চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। ব্রি-২৮ জাতের প্রতি কেজিতে তিন টাকা বেড়ে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া স্বর্ণা ৩০, কাটারিভোগ ৫০ থেকে ৫২, পাইজাম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে মোটা চালের দামও কেজিতে বেড়েছে অন্তত দুই টাকা।
মিল চাতাল মালিক, চাল ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা ও কৃষকদের অভিযোগ, উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৬০০ অটোরাইস মিল মালিক ইচ্ছামতো মজুদ গড়ে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন। অটোরাইস মিলগুলো লাখ লাখ মণ ধানের মজুদ করে নিজেদের ইচ্ছামতো চালের দাম নির্ধারণ করছে। এই অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সিন্ডিকেটটি চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলবে। রংপুরের মাহিগঞ্জসহ দিনাজপুরের পুলহাট, বগুড়া, নওগাঁ ও রাজশাহী থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এসব মোকামে গত এক সপ্তাহ থেকে অটোরাইস মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
রংপুরের আবু পাটোয়ারী, লিখন চৌধুরী, রহিম পাঠান, মহিদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন আড়তদার জানান, তাঁরা বিভিন্ন মোকাম ঘুরেও অটোরাইস মিলগুলোর কারণে চাল সংগ্রহ করতে পারেননি। অটোরাইস মিলের মালিকরা বাজার থেকে একতরফাভাবে ধান সংগ্রহ করে নিজেদের ইচ্ছামতো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁরা জানান, পুরো উত্তরাঞ্চলের হাতে গোনা ৫০০ থেকে ৬০০ জন বড় ব্যবসায়ী ও অটোরাইস মিল মালিক সারা দেশের চালের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
রংপুর সদরের পালিচড়া এলাকার একরামুল হক, গঙ্গাচড়ার নবনীদাস এলাকার লাভলু মিয়া, কাউনিয়ার শহীদবাগ এলাকার আফজাল হোসেন, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের শাহীন মিয়াসহ ধানচাষিরা জানান, তাঁরা আমন ধান কাটার পরপরই আলুসহ রবি ফসল চাষের খরচ জোগাতে কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচই উঠছে না।
রংপুর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম চালের দাম বৃদ্ধির জন্য সরাসরি অটোরাইস মিলগুলোকে দায়ী করে বলেন, অটো রাইস মিল মালিকরা আগে থেকে ধানের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে অটোরাইস মিলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছে।
রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা রায়হানুল কবির বলেন, সরকার ২৬ টাকা দরে এবার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করবে।

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ